সাবিহা বরাবরই ওর সমবয়সী মেয়েদের চেয়ে বেশি লম্বা আর দেখতে বেশি সুশ্রী ও আকর্ষণীয়া ছিলো। শরীরের আকৃতির দিক থেকে ও সে ছিলো অত্যন্ত কামনাময়ী, আবেদনময়ী, যে কোন ছেলের আকর্ষণের কেন্দ্রবস্তু, সব সময়। ওর স্তনদুটি ওর বয়সী মেয়েদের তুলনায় সব সময় বড় আর ভারী ছিলো, ব্রা ছাড়া ও সব সময় উপরের বা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতো সে দুটি, এই কারনে ওকে খুব ঈর্ষা করতো ওর বান্ধবীরা।
লম্বা চুল আর বড় কালো টানা টানা চোখ সাবিহার, শরীরের রঙ শ্যামলা ছেড়ে অনেকটাই ফর্সার দিকে, কিশোরী বয়সে সাবিহার ইচ্ছে ছিলো নাটক বা সিনেমায় অভিনয় করার, কিন্তু পারিবারিক বিধি নিষেধের কারনে সেই পথে যাওয়া হয়ে উঠে নাই, কিন্তু ওর চোখে মুখে নাটকের অভিনেত্রীদের মত একটা দুষ্ট চমকানো কাছে টানার মত চমক ছিলো। এখন এই মাঝ বয়সে এসে ও সাবিহা শরীরের গঠন ও আকার আকৃতির দিক থেকে ওর বয়সের অন্য ১০০০ টা মেয়ের চেয়ে আলাদা। ভিড়ের মাঝে আলাদা করে চিনে নিতে ভুল হবে না কারো যে কে সাবিহা।
বাকের যখন ওকে বললো যে ভেসে আসা শিপের সঙ্গে কিছু কাপড় ও আছে, তখন সাবিহা খুব আশা করেছিলো যে ওর নিজের অল্প কিছু কাপড় হয়তো পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মেয়েদের পড়ার মত কোন কাপড় ছিলো না সেখানে, যেগুলি ছিলো তা ওই জাহাজের এক পুরুষ রাধুনির কাপড় ছিলো, আর কাপড় বলতে শুধু ওই ব্যাটার পড়নের কিছু জাঙ্গিয়া, একটা চাদরের মত লম্বা বড় কাপড়ের টুকরা আর ওই ব্যাটার কিছু পাতলা রাতে ঘুমানোর গেঞ্জি।
তবে আরও কয়েকটা চাদরের টুকরা আর শার্ট পাওয়া গিয়েছিলো, যেগুলিকে অনেকটা লুঙ্গির মত করে আহসান আর বাকের পড়ে দিন কাটাচ্ছে এখন। ওই লোকটা ছিল প্রচণ্ড রকম মোটা, ফলে ওর কাপড় পড়লে সেগুলি এতো ঢোলা আর বেঢপ হয়ে ফুলে থাকে যে, সাবিহার পড়তে খুব অস্বস্তি হয়। মেয়েদের গায়ের একটা পোশাক ও ছিলো না ওর কাছে, শুধু ঝড়ের রাতে পড়ে থাকা পোশাকটাই হচ্ছে ওর পড়নের একমাত্র মেয়েলী পোশাক।
একদিন ওই পোশাক আর অন্যদিন ওই রাধুনির পড়নের জাঙ্গিয়া আর গেঞ্জি পড়ে এখন দিন কাটাচ্ছে সাবিহা। পুরুষ মানুষের জাঙ্গিয়া কিভাবে একজন মেয়ে মানুষ পড়ে সেটা ভেবে প্রথম প্রথম লজ্জা পাচ্ছিলো সাবিহা কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে ওর পুরো উরু দেখিয়ে শুধু গুদের কাছে ঢাকা ওই জাঙ্গিয়া পড়েই দিন কাটাতে হয় ওকে।
যার কারনে সাবিহার শরীর অনেকটাই খোলামেলা থাকে এখন, কারণ ওই মেয়েলী পোশাকটার ও সামনের দিকের সব বোতাম ছেঁড়া, সেটাকে সামনের দিকে একটা দড়ির মত জিনিষ দিয়ে যদি ও আটকে রাখার চেষ্টা করে সে।। মাঝে মাঝে সে বাকের আর আহসানের পড়নের শার্টগুলি ও পড়ে, তবে সব গুলিরই কিছু কিছু বোতাম ছিঁড়া।
কিন্তু একটা জিনিষের অভাব ওকে খুব পিড়া দিচ্ছে আর অস্বস্তির মধ্যে রাখছে, সেটা হলো অন্তর্বাস। ওর স্তনের বোঁটা দুটি খুব স্পর্শকাতর জিনিষ, খালি শার্ট বা পাতলা গেঞ্জি যখন বোঁটাতে লাগে আর সমুদ্রের বাতাস এসে যখন সেই কাপড়কে স্তনের বোঁটার সাথে ঘষা খাওয়ায়, তখন ও দুটি ফুলে শক্ত হয়ে যায়, যার কারনে শার্টের উপর দিয়ে ও দুটি বাইরের দিকে উকি মেরে থাকে।
আবার যখন বাতাসের বিপরীতে হাঁটে বা চলে সে, তখন পড়নের ঢোলা সেই গেঞ্জি এমন উৎকট দৃষ্টিকটুভাবে ওর বড় বড় বিশাল মাই দুটিকে আঁকড়ে ধরে যে সেদিকে আহসানের চোখের দৃষ্টি যাবেই। সেই জন্যে আহসানের সামনে বেশ সতর্ক থাকার চেষ্টা করে সাবিহা, যদি ও ওরা যখন বোটের কিনার ধরে পানিতে ভেসে ছিলো তখন ওর স্তন দুটিকে স্বামীর সামনেই আহসান দেখে ফেলেছিলো, সেই লজ্জা, অস্বস্তি ওর এখন ও যায় নি। আহসানের দিকে তাকালেই সেই কথা মনে পড়ে যায় সাবিহার।
সাবিহা ছোট বেলা থেকেই একটু বেশি যৌনসংবেদনশীল নারী, আর এখন ৩২ বছর বয়সে এসে ওর যৌনতার আকাঙ্খা একদম চুড়ায় এসে পৌঁছে গেছে। ও জানে, ও যদি বাকেরের কাছে বেশি বেশি করে চাওয়া শুরু করে তাহলে বাকের একদম নিঃশেষ হয়ে যাবে। কারন বাকেরের বয়স ৫০ পার হয়ে গেছে। যৌনতাকে যেভাবে সাবিহা উপভোগ করতে চায়, ঠিক সেই রকম আকাঙ্খা নেই বাকেরের ভিতরে।
আর সাবিহা বেশ আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করেছে যে এই রকম প্রতিকুল বিপদসঙ্কুল অবস্থার পড়ে ও ওর যৌন চাহিদা একটু ও কমে যায় নি। সাবিহা জানে যে ওর বয়সটা এখন এমন, যে ওর যৌন চাহিদা সর্বোচ্চই হওয়ার কথা, ওর ভিতরে ভিতরে একটা আগুন, একটা তিব্র আকাঙ্খা, যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই দ্বীপে আসার পর থেকে সে বেশ কয়েকবারই বাকেরকে ইঙ্গিত করেছে যে ওর সেক্স প্রয়োজন, বেশ কয়েকবারই বাকেরের ভিতরে সে যৌন ক্ষুধা জাগানোর চেষ্টা করছে কিন্তু বাকের ওর কথা বা আচরনকে মোটেই আমল দেয় নি। এটা ওর ভিতরে আরও বেশি হতাসার সৃষ্টি করেছে। আসলে এই দ্বীপে আসার পর এই ২ মাসের ও বেশি সময় ধরেই শুধু নয়, নিজেদের দেশ থেকে রওনা দেয়ার পর থেকে জাহাজে যে একটি মাস কাটিয়েছে ওরা, সেখানে ও ওদের কাছাকাছি আসা বা সেক্স করা সম্ভব হয় নি, কারন জাহাজে এক রুমের কামড়াটি তে ওদের তিনজনকেই এক সাথে ঘুমাতে হয়েছে।
আর ছেলের সামনে স্ত্রীর শরীরের উপর চেপে বসাতে ঘোর আপত্তি আছে বাকেরের। কিন্তু সাবিহা ওর নিজের ভিতরের এই আকাঙ্খাকে কিভাবে তৃপ্ত করে, ওর শরীরে যেই আগুন জ্বলছে সেটাকে কিভাবে নিভায়? কিন্তু নিজের মাথা থেকে যৌনতার এই ভুতকে সাবিহা তাড়ায় এই বলে যে, ওর এখন নিজের চেয়ে ওদের ছেলের দিকে বেশি খেয়াল করা উচিত। ছেলের সামনে কিছু করে ফেললে ছেলে হয়ত বুঝবে না, তাই ছেলের কথা চিন্তা করতে হবে ওদেরকে, ছেলের সামনে সাবধানে চলাফেরা, কথা বলা উচিত। তবে এগুলি যে শুধুই নিজেকে মিছে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা, সেটা ও সে জানে।
যেহেতু আহসান একজন সুস্থ কিশোর, তাই সাবিহা জানে যে ইদানীং এই দ্বীপে আসার পর থেকে ওকে বেশ তীক্ষ্ণ নজরে পর্যবেক্ষণের চোখে দেখতে শুরু করেছে ওর ছেলে, কারন ওর শরীরে এখন পরিবর্তনের জোয়ার বইছে, ওর উত্তেজনা, আবেগ, ক্রোধ, রাগ, উচ্ছ্বাস সব কিছুকেই ওর শরীরর হরমোন নিয়ন্ত্রন করছে এখন। ওর যে কোন প্রতিক্রিয়া এখন খুব তিব্র ধরনের হবে।
মেয়ে মানুষ যে ভিন্ন একটা জিনিষ সেটা বুঝতে শুরু করেছে সে, মেয়েদের শরীরের গঠন আকার আকৃতি ও যে ভিন্ন সেটা ও বুঝে যাচ্ছে। এই জন্যেই এই দ্বিপের একমাত্র নারী শরীরকে সে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করে, যদিও সব কিছুই খুব সাবধানে, সন্তর্পণে করে আহসান কিন্তু সাবিহা টের পেয়ে যায়, কখন আহসান ওর দিকে ওই রকম দৃষ্টিতে তাকায়।
হাজার হলে ও মা তো সে, তাই যতটুকু সম্ভব নিজের শরীর ঢেকে রাখতেই চেষ্টা করে সাবিহা। সব সময় সতর্ক থাকে যেন ছেলে কিছু বুঝে না ফেলে, যদি ও ওর মনের ভিতরে যৌন আকাঙ্খা দিনে দিনে প্রচণ্ড রুপ ধারন করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত সাবিহা কাজ করার সময় বেশ কয়েকবার পিছলে পড়ে গিয়েছিল, তখন ও ওর শরীরের অনেক কিছুই আহসান দেখে ফেলেছে।
আর প্রতিবারই আহসানকে উত্তেজিত হয়ে যেতে দেখেছে সাবিহা, এমন কি আহসানের চোখ মুখের দিকে তাকালে ও সাবিহা বুঝতে পারে যে ছেলে কখন উত্তেজিত। কিন্তু একটা কথা নিজের মনে একটু ও স্বীকার করে না সাবিহা যে, ছেলের এই উত্তেজিত হওয়া বা চোরা চোখে ওর দিকে তাকানো যে সাবিহার নিজের শরীরের ভিতরে কি রকম ঝড় তুলে দেয়, কেমন এক যৌনতার উত্তেজনা এনে দেয়। কিন্তু এটাকে অস্বীকার করার মানে এই না যে, এমন কিছু বাস্তবে ঘটে না, এটা ও সাবিহা জানে।
এই দ্বীপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশা ধীরে ধীরে কমতে লাগলো বাকের আর সাবিহার মনে, দিন থেকে সপ্তাহ, এর পড়ে মাস, অন্য আরেকটি মাস চলে যাচ্ছে। প্রায় ৫০ দিন হয়ে গেছে ওরা এই দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছে। সাবিহা প্রতিটি দিন গুনে রাখছে। ওদের ভিতরের হতাশা ওরা নিজেদের ভিতরে লুকিয়ে রাখলো যেন আহসান বুঝতে না পারে।
আহসানের সামনে ওরা সব সময় বলতো যে, ওরা জানে, ওদের কে খুঁজতে অনেক লোক বের হয়ে গেছে, কিন্তু যেহেতু ওরা অনেক দূরে চলে এসেছে, তাই খুঁজে পেতে ওদের দেরি হচ্ছে, খুব শীঘ্রই ওরা এই দ্বীপের খোঁজ বের করে ফেলবে।, এই সব আশা ব্যাঞ্জক কথা। সাবিহা আর বাকের জানে না যে আহসান ওদের এই সব কথা বিশ্বাস করে কি না, কারন আহসান খুব বুদ্ধিমান ছেলে আর এই দ্বীপে ওরা যেই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে সেই অবস্থা আর পরিস্থিত সম্পর্কে বুঝতে শিখে গেছে এখনই সে।
যতই সময় গড়াতে লাগলো সাবিহার পক্ষে ওর এই আশাব্যাঞ্জক কথা চালিয়ে যাওয়া এবং ওরা আবার কোনদিন লোকালয়ে ফেরত যেতে পারবে এমন একটা ব্যবহার দেখানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে, ওর মন মেজাজ সব সময় তিরিক্ষি হয়ে যাচ্ছে। বাকেরের সামনে মাঝে মাঝেই ওর এই বিরক্তি প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছিলো, যেটাকে বাকের ও একটু ভয় পেতো। সাবিহার সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারন ছিলো আহসান, ওর ছেলে।
ছেলের মুখের দিকে তাকালেই একটা অব্যক্ত ব্যথা আর উপচে পড়া দুঃখের অনুভুতি যেন ওর গলা চেপে ধরতো। এই বয়সের একটা ছেলে যেভাবে নিজের জীবন কাটায় সেটা থেকে ওকে বঞ্চিত করে এই রুক্ষ আদিম জীবনে ওরা ওকে কিভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! ও কলেজ যেতে পারবে না, বন্ধুদের সাথে মিশে সময় কাটাতে, গল্প করতে, সিনেমা দেখতে, মজার মজার খাবার খেতে, কিছুই করতে পারবে না, এমন কি একটা মেয়েকে ও পাবে না যাকে সে বিয়ে করতে পারে, নিজের মনের ভালোবাসা উজার করে দিতে পারে, সেই মেয়ের ভালোবাসা নিজের মনে অনুভব করতে পারে।
সভ্য সমাজে আচার আচরন, কায়দা কানুন, কথা বলা, ভদ্রতা দেখানো, কারো উপকার করা, খারাপ মানুষ চিনা, কোন কিছুই ওর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাছাড়া ডাক্তার, ঔষূধ, হাসপাতাল ছাড়া এই আদিম পরিবেশে ওর জীবন দৈর্ঘ ও ছোট হয়ে যাবে, এসব কথা চিন্তা করলেই মন ভারী হয়ে উঠে, চোখের পানি আপনাতেই বেড়িয়ে যায়।
আশার কথা শুনানোর পাশাপাশি সাবিহা খেয়াল রাখছিলো যেন আহসান লেখা পড়া ভুলে না যায় আর নতুন নতুন কিছু শিখতে পারে। সাবিহা নিজে যেহেতু শিক্ষিত, লেখা পড়া সে কলেজ পর্যন্ত পড়েছে, তাই সে নিজের হাতেই উঠিয়ে নিলো ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব। কিছু বইয়ের জ্ঞানের সাথে সাথে সামাজিক আচার, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, অঙ্ক, এসব ও শিখার প্রয়োজন ওর। বাকের ওর স্ত্রীর এই সব কাজে মোটেই উৎসাহ দেয় না, ও মনে করে সাবিহা শুধু শুধু ওর সময় নষ্ট করছে, ওদের ছেলের এখন উচিত, কিভাবে এই বন্য পরিবেশে একাকি দ্বীপে জীবন টিকিয়ে রাখা যায়, সেই শিক্ষা, হাতে কলমে।
কিভাবে মাছ ধরা যায়, কিভাবে ঘর বানানো যায়, কিভাবে শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়, এসব শিখা ওর জন্যে জরুরি। কারন এই প্রাকৃতিক বন্য বিপদ সঙ্কুল পরিবেশে ছোট একটা ভুলই মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে, তাই জীবন বাঁচিয়ে চলার শিক্ষাই ওর জন্যে বেশি দরকার। বাকের চায় না যে ওর ছেলে বোকা, মেয়েলী দুর্বল ধরনের হয়ে বেড়ে উঠুক, কিন্তু দুখের বিষয় এই যে এই দ্বীপে আসার পর থেকে ছেলেকে সে সব সময় ওর মায়ের আঁচল ধরে পিছনে পিছনে চলতেই দেখেছে সে।
এটা দেখে বাকের ধরেই নিয়েছে যে সাবিহা শুধু শুধু ওর সময় নষ্ট করছে, কিন্তু বাকের ওদের এই পরস্পরের সাথে কথা বলা সময় কাটানোকে মেনে নিয়েছে, কারন এর ফলে হয়ত ওরা এই নির্জন দ্বীপে এই বন্য রুক্ষ কষ্টকর পরিবেশের কথা ভুলে যাবে, যার ফলে এখানে টিকে থাকার সংগ্রামে ওরা বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারবে। নয়ত মনের কষ্টে ওদের ভিতরে টিকে থাকার ইচ্ছেতাই হয়ত মরে যাবে। এছাড়া মা ছেলে এক সাথে গল্প করে সময় কাটালে ওদের মনের কষ্টটা ও দুর হবে। সাবিহার সাথে ওর মনের একটা দূরত্ব তো আছেই, তাই ইচ্ছে করেই ওদেরকে বাধা দেয় না সে।
তবে সাবিহা বুঝতে পারে বাকেরের মনের কথা, তারপর ও সে বাকেরকে রাজি করালো যে, দিনের মাঝের বেশ কয়েক ঘণ্টা সাবিহা আর বাকের একা সময় কাটাবে প্রতিদিন, সাবিহা ওকে লেখা পড়া শিখাবে, সেই সময়ে বাকের ওদেরকে মোটেই বিরক্ত করবে না, এছাড়া বাকি সময়টা বাকের ছেলেকে নিয়ে কাজে ব্যাস্ত থাকতে পারে।
বাকের এই কথা শুনে খুশি হয় নি কিন্তু স্ত্রীর কথার বিপক্ষে তর্ক করে পরিবেশটাকে খারাপ করে দিতে ও ওর ইচ্ছে নেই। এতদিন সাবিহা বলতো বাকের নাকি বেশি জেদি। তবে এই দ্বীপে আসার পর থেকেই সাবিহা ও যেন জেদি হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে, নিজের কথার বিপক্ষে কোন যুক্তি শুনতে চায় না সে বাকেরের মুখ থেকে।
যেটুকু সময় বাকের ছেলেকে পায়, তখন মাছ ধরা, জীব জন্তু, পাখি শিকার করা, এই গুলি শিখাতে লাগলো। আহসান খুব তাড়াতাড়ি শিখে নেয় যে কোন কিছু, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে বাকের বলে দিতে পারে যে এই সব কাজ ওর মোটেই পছন্দ না, এর চেয়ে বরং ওর মায়ের সাথে বসে লেখাপড়া করা বা কবিতা আবৃতি করতে পারলেই আহসান খুশি হবে।
সাবিহা চায় যে ছেলের সাথে কাটানো সময় গুলিতে ওকে বাকের একদম বিরক্ত না করুক, আর ওদের মাঝে নির্জনতা থাকুক, সে জ্ঞান খাটিয়ে কি কি শিখানো হবে আহসানকে, সেটা ঠিক করলো। দ্বীপের যেই ঝর্নার কাছে ওদের বাড়ি, এর থেকে একটু দূরে অন্য আরেকটি বড় ঝর্না আছে, যার কথা আগেই বলা হয়েছে একটু দূরে, প্রায় ১ মাইলের মত দূরে, ঝর্নার সামনের জায়গাটা অনেকটা পুকুরের মত, চার পাশে পাথর, তিন দিক থেকে ঘেরা, শুধু সামনে সমুদ্রের দিকে খোলা, ওই জায়গাটাকেই সাবিহা বেছে নিলো ওদের প্রতিদিনের শিক্ষার কাজের জন্যে।
বাকেরকে সেই কথা জানিয়ে দেয়া হলো যেন ওই পথ দিয়ে ওই সময়ে সে না যায়। মাঝের এই বিরতিতে অঙ্ক, ইংরেজি আর পড়তে শিখার জ্ঞান ভুলে গেছে কি না আহসান, সেটা যাচাই করে নিতে লাগলো সাবিহা আগে। ওদের ভাগ্য ভালো যে, ওই দ্বীপে ভেসে আসা জাহাজের সাথে কিছু বই পত্র ও ছিলো, সেগুলিই এখন সাবিহা পড়াবে ছেলেকে, আর লেখার জন্যে বালুতটের চেয়ে সুন্দর জায়গা আর কোথায় পাবে ওরা।
ওই সব বই ছাড়া ও ইতিহাস, জীবন, মানুষ, কবিতা, উপন্যাস, জীব বিচিত্র এই সব নিয়ে ও কথা বলতো সাবিহা। অঙ্ক ও করাতো, তবে সব অঙ্ককে আগে নিজে মনে মনে সমাধান করে তবেই ছেলেকে শিখাতো। এমনকি মাঝে মাঝে ছেলেকে কিছু বাড়ির কাজ ও দিয়ে দিতো সে, যেটা ছেলে নিজে নিজে করে এনে দেখাবে মাকে।
লেখাপড়ার বাইরে ওদের এই মা ছেলের একত্র নির্জন সময় কাটানো মুহূর্ত গুলিকে ওরা দুজনেই ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ওর মায়ের পিছনে গিয়ে আহসান ওর মায়ের মাথার চুলে বিলি কেটে দিতো আর সাবিহা সামনে প্রবাহমান সমুদ্রের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতো মিনিটের পর মিনিট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
কত কথা যে ওদের মনে উদয় হতো সেই সময়টুকুতে, সেটা আমি হয়ত আপনাদেরকে বুঝাতে পারবো না। দুজনে মিলে সুর করে একত্রে কবিতা পড়তে বা গানের কলি ভাঁজতে ও পছন্দ করে। এছাড়া ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি, কোনটা নিয়েই না ওরা আলোচনা করতো না! শুধু একটা ব্যতিক্রম ছিলো সেটা হলো সেক্স।
এটা নিয়ে সাবিহা মোটেই মুখ খুলতো না ছেলের কাছে। কখনও যদি ওদের কথার ভিতরে ওটা চলে আসতো তাহলে ও সাবিহা খুব চালাকির সাথে কথাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতো। একটা বাড়ন্ত কিশোর ছেলের সাথে যৌনতা বা সেক্স নিয়ে কিভাবে সে আলাপ করবে, এটা ওর মাথায় আসতো না।
কিন্তু সে জানে যে ওদের কথা ওদিকেই যাবেই, কোন না কোনদিন। ও নিজে কাউকে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে, এটা বলার মত যোগ্যতা ওর নেই বলেই মনে করে সে। সাবিহা চাইতো যে এইসব ব্যাপারে ছেলেকে ওর বাবাই জ্ঞান দিক। সে বাকেরকে কয়েকবার বলেছে ও, কিন্তু বাকের রাজি না ছেলের সাথে এইসব নিয়ে কথা বলতে।হঠাতই একদিন যৌনতার প্রশ্ন এসে গেলো ওর কাছে, আচমকা, কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই।
আহসান ওর মায়ের মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো মায়ের পিছনে বসে একটা পাথরের উপরে, সাবিহা নিচে বালুর উপরে, “মা, আমি তোমাদেরকে কাল রাতে দেখেছি…”
“আমদেরকে দেখেছো?”-সাবিহা জানতে চাইলো।
“হুম, তোমাকে আর বাবাকে বিছানার উপরে…”
সাবিহার গাল চোখে মুখ লালাভ হয়ে উঠলো, লজ্জায় ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না, ওর শরীর যেন কাঁপছিলো, ছেলে কি নিয়ে কথা বলছে সেটা বুঝতে পারলো সে। অবশেষে অনেকদিন পড়ে গতকাল রাতে ওদের দুজনের মধ্যে সেক্স হয়েছে, যদি ও খুব বেশি একাকী সময় পায় নি ওরা, বিশেষ করে অনেকদিন পড়ে বাকেরের ছোঁয়া পেয়ে যেন পাগল হয়ে উঠেছিলো সাবিহা, ছেলে দেখে ফেলেছে সেটা, “আমদেরকে লুকিয়ে দেখা তোমার উচিত না আহসান? কেন এমন করলে তুমি?”-সাবিহা বেশ রেগে গেলো ছেলের উপর যদি ও রাগার মত কোন কাজই সে করে নি।
“আমি লুকিয়ে দেখি নি তোমাদেরকে, তোমাদের বিছানা আর আমার বিছানা তো পাশেই, আমি ইচ্ছে করে দেখি নি…”-আহসান ওর পক্ষে যুক্তি দিলো।
সাবিহা জানে যে ছেলে সত্য কথা বলছে, ও আর বাকের ও জানতো যে এটা খুব রিস্ক হয়ে যাচ্ছে ওদের জন্যে, কিন্তু সাবিহা ওর শরীরের ক্ষিধেকে কোনভাবেই সামলাতে পারছিলো না। সাবিহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না, চুপ করে রইলো সে, তখনই ছেলের পরের কথাতে সে আরও বেশি অবাক হলো।
“আমি কি কোনদিন এই রকম কোন মেয়ের সাথে করতে পারবো, মা?”-আহসানের চোখের দৃষ্টি ও সমুদ্রের দিকে, “মানে, আমি কোনদিন কোন মেয়েকে ছুয়ে ও দেখি নি, কাউকে চুমু খাই নি, কিভাবে কি করে, কিছুই জানি না…আমি …আমি…”-বাকি কথাগুলি আর বের হলো না আহসানের মুখ দিয়ে ওর চোখের কোনে চিকচিকে অশ্রুর কনা দেখা দিলো, সাবিহা মাথা ঘুরিয়ে ছেলের দিকে তাকালো, ছেলের কথা ওর মনে ও যেন কষ্টের এক পাথর নিক্ষেপ করলো, ওর নিজের চোখটা ও কেন যে সব সময় ভিজে উঠে অল্পতেই, জানে না সে।
“অবশ্যই তুই করবি বাবা, কারন আমরা এখান থেকে উদ্ধার পাবো বাবা, উদ্ধার পাবো…”- এক বুক কষ্ট নিয়ে ও ছেলেকে মিথ্যে আশা দিতে ভুললো না সাবিহা। কোনভাবেই ছেলের আশাকে সে মরে যেতে দিতে পারে না।
“কেন মিথ্যে বলছো মা, এই রকম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, কেউ আমাদেরকে খুঁজতে আসবে না, আমরা চিরদিনের জন্যেই এখানে আটকা পড়েছি, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত, কোন আশা নেই…আমরা পুরো একাকী, এভাবেই একাকী বাকি জীবনটা পার করতে হবে আমাদেরকে”-একটু থেমে আহসান আবার বললো, “কিন্তু বাবার জন্যে তো তুমি আছো, আমার জন্যে কেউ নেই…”-আহসানের চোখের পাশ দিয়ে পানির ফোঁটাকে গড়িয়ে পড়তে দেখলো সাবিহা, ওর কাছে মনে হলো, কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিয়ে ওর বুকের পাঁজরগুলিকে একটি একটি করে ভাঙছে ওর চোখের সামনে।
সোজা হয়ে দাড়িয়ে আহসানকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো সাবিহা, “আমি খুব দুঃখিত বাবা, আমি জানি, এই কঠিন সময়টা আমার আর তোর বাবার জন্যে যতটা না কঠিন, তোর জন্যে আরও অনেক বেশি কঠিন, কিন্তু আমরা তো আশা ছাড়তে পারি না সোনা, আমাদের উদ্ধার পাবার আশা করতেই হবে, আমাদেরকে যে ভবিষ্যতের আশা করতেই হবে রে, সোনা…”-সাবিহার গলা ও ধরে এলো।
“কিসের ভবিষ্যৎ?”-যেন ধনুকের চিল্কা থেকে একটা তীর সজোরে বের হয়ে গেলো, লাফ দিয়ে দাড়িয়ে মাটিতে থুথু নিক্ষেপ করে রাগী স্বরে বলে উঠলো আহসান, “কোন কচুর ভবিষ্যৎ? আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই মা, আর এই জন্যে দায়ী আব্বু, আমি উনাকে ঘৃণা করি”-এই বলে ওর মায়ের দিকে পিছন দিয়ে আহসান সমুদ্রের দিকে ঘুরে গেলো, রাগে ওর শরীর কাঁপছে। পিছন থেকে সাবিহা ওকে জরিয়ে ধরলো আবার ও। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকলো আহসান চেষ্টা করছিলো ওর ভিতরের রাগকে কমাতে, ওর আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে। সে ছোট হলে ও বুঝতে পারে যে, এই বিদেশ যাত্রা ওর আম্মুর ইচ্ছাতেই হয় নি, ওর আম্মুর সায় ও ছিলো না, শুধু ওর আব্বুর জেদ আর উনার নিজের উন্নতির জন্যে ওদেরকে দেশ ছেড়ে আপন মানুষদের ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার জন্যে পথে নামতে হয়েছে, আর এখন? এখন কোথায় ওরা?
আহসান ওর গলা নরম করলো আর মৃদু স্বরে বললো, “আমি দুঃখিত মা, আমার তোমাকে দোষ দেয়া উচিত না, আমি বাবাকে ও ঘৃণা না করার জন্যে চেষ্টা করি, কিন্তু…কিন্তু আমি বড় হচ্ছি, আর আমার ভিতরে আবেগ আমাকে একেক সময় এমন পাগল করে তোলে, মনে হয় আমার জীবন যেন সমুদের পানিতে ধীরে ধীরে ধুয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, আমি এক অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি…”
“আমি জানি সোনা, আমি জানি…আমি বুঝি…”-সাবিহা পিছন থেকেই ছেলের গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো।
“আমার শুধু…আবেগ…মানে ভিতরে একটা অনুভুতি আমাকে চেপে ধরে, আমার ভিতরের কোন একটা অনুভুতি…আমি জানি না আমি কি করবো, আমার শরীর পরিবর্তন হচ্ছে, আমি শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি আমার ভিতরে, আমার মনে হয় আমি পিছিয়ে পড়ছি বার বার, ওই অনুভুতিগুলি এলেই আমি আমার মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, অন্য কথা ভাবা চেষ্টা করি…কিন্তু কাল রাতে তোমাকে আর আব্বুকে দেখে, আমার যে কেমন লাগছিলো, আমি বলতে পারবো না, আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো আমি যেন সাগরে গিয়ে ঝাঁপ দেই, আমি জানি তোমরা সেক্স করছিলে, কিন্তু ওই শব্দটা ছাড়া আমি ওই ব্যাপারে আর কিছুই জানি না। আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম সকালে, উনি শুধু আমার উপর রেগে গিয়ে চিল্লাতে শুরু করলো, যে আমার এখন শুধু কিভাবে বেঁচে থাকা যায়, সেই চিন্তা করা উচিত, অন্য কোন কথা চিন্তা করা উচিত না…কিন্তু শুধু বেঁচে থেকে কি করবো আমি, আমার তো কোন ভবিস্যতই নেই…কোন কারনে বাঁচবো আমি, বলো?”
ছেলে কি বুঝাতে চাইছে, সেটা সাবিহা বুঝতে পারে, ও ভিতরে ভিতরে খুব সঙ্কুচিত হয়ে থাকে এই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে, “আমার কারনে বাঁচবি তুই, আমার কারনে, এই দ্বীপে তোকে হারালে যে আমি নিজেই আর একটি মুহূর্ত ও বেঁচে থাকবো না রে সোনা। তবে…আসলে,… আমি জানি না এই সব নিয়ে কিভাবে কথা বলতে হয়, বাবা, আমি সত্যিই জানি না,”-সাবিহার গলা খুব দুর্বল শুনাচ্ছিলো, “তোর আব্বুই আমার জীবনের একমাত্র যৌন সঙ্গী, আর আমি যখন বড় হয়েছি, কেউ আমাকে কোনদিন এই ব্যাপারে কিছু শিখায় নি, বা আমার অনুভুতি নিয়ে ও আমি কারো সাথে কথা বলতে পারি নি। এর আগেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
“বাবা, আমার কথার উত্তর দিবে না, তুমি ও আমার সাথে এটা নিয়ে কথা বলবে না, তাহলে আমি কার কাছে জানতে চাইবো, এই পাখিদের কাছে, নাকি সমুদ্রের মাছেদের কাছে?”-আহসানের গলায় স্পষ্ট অভিমান, আর ওর অভিমান যে কত তীব্র সেটা ওর মায়ের চেয়ে ভালো আর কে জানে। সাবিহা জানে যে আহসান সব দিক দিয়েই ওর মতো, শুধু এই একটা দিক সে পেয়ে গেছে ওর বাবার থেকে, সেটা হলো রাগ, জেদ, অভিমান।
0 Comments